ভাসছে মানুষ, ডুবছে স্বপ্ন। পরিচিত এ দৃশ্য এবার উত্তরের। হাওরের শোক কাটাতে না কাটাতেই উত্তরাঞ্চলে পানিবন্দী লাখ লাখ মানুষ। যাদের কেউ হারিয়েছেন স্বজন, কেউবা ঘরবাড়ি, সহায় সম্বল। এরইমাঝে এবারের বন্যায় আক্রান্ত উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৬ লাখ মানুষ।
চীনের অতিবৃষ্টি, ভুটান ও ভারতের বন্যা পানি বাড়াচ্ছে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকায়। ফলে বাড়ছে তিস্তার পানিও। একইসাথে নেপালের বন্যা বাড়াচ্ছে গঙ্গার পানি। এছাড়া ত্রিপুরার বন্যার পানি এসে মিলছে মেঘনায়। সবমিলিয়ে আগামী শুক্র, শনিবারের মধ্যে এসব নদীর পানি অতিক্রম করবে বিপদসীমা। ফলে চাঁদপুর পয়েন্টের পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে।
বন্যা-ঝড়-জলোচ্ছ্বাস-খরা এ দেশে নতুন কিছু নয়। অসংখ্যবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশের লড়াকু মানুষ। এবার বন্যায় ১৮টির মতো জেলা পানিতে ভাসছে। এই পানি আরো বাড়বে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছে। পানিবন্দি ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ। খেয়ে না খেয়ে তারা আছেন। ত্রাণ অপ্রতুল। বিশুদ্ধ খাবার পানি নেই যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানিতে ডুবে মানুষ ও গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। ফসলি জমি পানির নিচে। শিশুসহ প্রায় ত্রিশজন পানিতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে।
১৯টি নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকায় আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বেড়েছে চুরি ও ডাকাতি। বিল এলকায় ট্রলারে চেপে ডাকাতরা হানা দিচ্ছে। এ এক ভয়ংকর অবস্থা। অথচ জঙ্গি তৎপরতার ডামাডোলে সবকিছুই যেন ঢাকা পড়েছে। বন্যায় লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, জামালপুর ৫০ লাখ মানুষ পানিবন্দি। কুড়িগ্রামে ৭১৯টি গ্রাম পানির নিচে।গাইবান্ধায় ২২৩টি গ্রামের মানুষ পানির মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী, মুন্সীগঞ্জ, পাবনা, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানির নিচে।
এসব বন্যাউপদ্রুত এলাকার খণ্ড চিত্র। সার্বিকভাবে বন্যা পরিস্থিতি দিন দিন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। বন্যার্তদের দুর্দশা লাঘবে সরকার তেমন কোন জোরালো উদ্যোগে লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এই পরিস্থিতি সরকারকে জোরালো ভুমিকা রাখতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সমাজকল্যাণমূলক সংগঠনগুলোর উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। এ সময় বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানো খুব জরুরি। দেশের তরুণদের এ ধরনের মানবসেবামূলক কাজে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করতে হবে। এর ফলে তারা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো খারাপ এবং ধংসাত্মক পথে পা বাড়াবে না।